• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬
জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

সন্ধেবেলা একটি ফোন : “শঙ্খ ঘোষ বলছি”


বেবী সাউ
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২২, ০১:৩৫ পিএম
সন্ধেবেলা একটি ফোন : “শঙ্খ ঘোষ বলছি”

তখন ‘কাঁদনাগীত : সংগ্রহ ও ইতিবৃত্ত’ বইটির পাণ্ডুলিপি তৈরি করছি। ততদিনে ‘এইসময়’ এবং ‘একদিন’ পত্রিকায় এই বিষয়টি নিয়ে আমার কিছু লেখা বেরিয়ে গেছে। রোজ কিছু কিছু ফোন আসছে বিষয়টি সম্পর্কে, বিষয়টির নতুনত্ব সম্পর্কে জানতে চেয়ে। হঠাৎ সন্ধেবেলা সেরকম একটি ফোন : “শঙ্খ ঘোষ বলছি।” আমি নিশ্চুপ, নিরুত্তর এবং বাকহারা। বললেন, “এসো একদিন। কথা হবে বিষয়টি নিয়ে।” কিন্তু আমার আর যাওয়া হয় না। সঙ্কোচ এবং ‘কী বলবো’—আমার যাওয়া বন্ধ করে রাখে। সময় চলে যায়। ফেসবুকে দেখি, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতি আর আমি কথা গোছাই। ভাবি, এবার নিশ্চয়ই যাবো। অনেক অনেক অনেক প্রশ্ন করবো তাঁকে। জেনে নেব আমার বিষাদের কারণ, বিষণ্ণতার কারণ—জেনে নেব তথ্য,  জ্ঞান এবং মানুষকে ভালোবাসার মন্ত্র। নিজেই নিজেকে সাজাই। প্রস্তুত করি। হঠাৎ করে সুযোগ আসে একদিন। কৃত্তিবাসের অনুষ্ঠানে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মদিন। আমি গেছি অন্য অনুষ্ঠানে নন্দন চত্বরে। শুনলাম তিনি এসেছেন। আমিও আকুল। বাংলা আকাদেমি সভাগৃহ আলো করে আছেন বিভিন্ন কবি, সাহিত্যিক। মুহূর্তে আমার পায়ে কে যেন বেঁধে দিল কয়েক মণ ওজনের ভারী পাথর। তাও ধীর পায়ে এগিয়ে যাই সামনের দিকে। দেখি, শ্বেতশুভ্র তিনি বসে আছেন... বসে আছেন... আর আমি আবারও বাক্যহারা... কোনোমতে একটা প্রণাম করে বেরিয়ে আসি। কথা অধরা থেকে যায়। চুপচাপ। চোখে ভরে আছে জল। জানি না, কেন কাঁদলাম আমি! কেন চোখ ভরে এলো জলে!

কবি শঙ্খ ঘোষের সঙ্গে লেখক

১২ই জানুয়ারি, ২০২০। রোববার।  কলকাতাতেই ছিলাম।  যোগাযোগ করলাম আমাদের সন্দীপনদার সঙ্গে। সন্দীপন চক্রবর্তী। শঙ্খ বাবুর কাছে যাওয়ার বহুবার বহু প্ল্যান আমাদের ভেস্তে গেছে। বহুবার সন্দীপন দা বলেছে, শঙ্খ বাবু দেখা করতে চেয়েছেন তোমার সঙ্গে। সেদিন গেলাম সন্দীপনদার আড়ালে, নিজেকে যতটা সম্ভব ঢেকে রেখে। পৌঁছলাম। বসে আছেন তিনি। মুখে মৃদু হাসি। এসেছেন বিশ্বখ্যাত চিত্রকর শাহাবুদ্দিন। তাঁকে পেয়ে শঙ্খ বাবু যেন আত্মীয়তাকে স্পর্শ করছেন। খুব খুশি। কথা বলছেন। শাহাবুদ্দিন তাঁকে মিষ্টি খাইয়ে দিচ্ছেন আর তিনিও আনন্দের আতিশয্যে ভাসছেন। সুন্দর মুহূর্ত তো আমাদের জীবনে খুব কম আসে! সেদিন নিজেকে খুব খুব ভাগ্যবান মনে হচ্ছিল। যাই হোক, সন্দীপনদা বললেন, “যাও! কথা বলো!” কথা? কথা! ধীরে ধীরে বসলাম তাঁর কাছে। কিন্তু ততক্ষণে আমার  কথা সব হারিয়ে গেছে! কথা নাই! কাছে একটি কবিতার বই ছিল, কথাকে আড়াল করতে চেয়ে তাই তুলে দিলাম তাঁর কাছে। তিনি উল্টেপাল্টে দেখলেন, পড়লেন কয়েকটি কবিতা। আর আমি আরেকবার ঝাপসা হলাম। আরেকবার অস্পষ্ট হলো পৃথিবী। উনি কীসব বললেন! কথা জড়িয়ে যাচ্ছিল। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারিনি। আমার অক্ষমতা আমাকে বিব্রত করে তুলছিল। আমি অসহায়ভাবে তাঁর চোখের দিকে তাকালাম... আর... আর...

সাহিত্য-সংস্কৃতি বিভাগের আরো খবর

Link copied!